কোন রকম ভূমিকা না রেখেই চলুন শিমলা মানালি ট্যুরের গল্প করা যাক। বেড়ানোর প্ল্যান করার আগে আমাদের শুধু এতটুকু জানা ছিল শিমলা মানালি অনেক দূর। কিন্তু বরফ দেখার অদম্য ইচ্ছা আমাদের সব দূরত্বকেই খুব অল্প করে দেখাচ্ছিল। যাইহোক, দিল্লি এয়ারর্পোটে পৌছানোর পর মিনিবাসে চেপে বসলাম। ড্রাইভারকে বললাম এসি টা বাড়িয়ে দিতে। বড্ড গরম ছিল, সবাই আড্ডা জুড়ে দিলাম এই প্রচন্ড গরমে বরফ কোথায় পাব তাই নিয়ে ।
দিল্লীকা লাড্ডুর টেস্ট পেলাম যখন আমাদের পাক্কা ৪ ঘন্টা জ্যাম ঠেলে যাতে হয়েছে, শুধুমাত্র দিল্লী শহর ছাড়তেই । ধীরে ধীরে দিল্লী ছেড়ে আমরা হাইওয়েতে উঠলাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা । সত্যিই বলতে কি ইন্ডিয়া যে উন্নত হচ্ছে তার প্রমান তার হাইওয়ে, ছয় লেনের হাইওয়েতে শোশো করে গাড়ি ছুটে চলে। ড্রাইভার ব্যাটা কে বললাম ভাই আর একটু জোরে টানো, উত্তর আসলো “না দাদা জোরে যাওয়া যাবে না, ভাই কানুন মানন্না হে !” . যাইহোক ইন্ডিয়ানরা হে এত্ত আইন মানে আমার জানা ছিলোনা !!!
এরই মধ্যে পুরোপুরি আঁধার নেমে এলো, পেট ও চোঁচোঁ শুরু করলো। হাইওয়ের ধারের একটা ধাবায় দাঁড়ালাম, হাতে বানানো রুটি, ডাল সবজি দিয়ে চটপট পেট পুজা সারলাম। গাড়িতে উঠতেই আস্তে আস্তে দুই চোখের পাতা লগেে আসলো। মনেহয় ৩ ঘন্টাপর ঘুম ভাঙল, প্রথমেই একটু ধাক্কা লাগলো কোথায় আমরা, কিছুই তো দেখছি না। পরে খেয়াল করে দেখলাম, কোন এক উচু পাহাড়ের গা ঘেসে আমরা উপরে উঠছি তো উঠছি, সত্যি বলতে কি অনেক উচু পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে কোন বাড়ি ঘর নেই, নিখাদ পাথররে পাহাড় যাকে বলে, একদম খাড়া। এই পাহাড় থেকে কোন ক্রমে একবার পিছলালে কোন রক্ষা নেই। তবে যারা ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে যাবেন তাদের চিন্তার কারন নেই, বেশীর ভাল রাস্তাই ০৪ লেনের আর গাড়িগুলোও হুড়োহুড়ি করে না । আমরা শিমলা পৌছাতে পৌছাতে গভীর রাত, শহর হতে প্রায় ২ কিলো দুরত্বে একটা রিসোর্ট ভাড়া করেছিলাম, ড্রাইভারও ঠিক বুঝে উঠছিলোনা পাইন গাছের ফাঁকা দিয়ে দেখতে পাওয়া রিসোর্টে পৌঁছানোর রাস্তা ঠিক কোনটা। যাইহোক, বাস হতে নামতেই ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা পেলাম, বূঝলাম আমাদের দেশের চরম ঠাণ্ডার চাইতেও শিমলার রাত (গরমরে দিনেও) অনেক বেশী শীতল ।
ঘূম থেকে উঠেই প্রথমে বারান্দায় গেলাম। যতদূর পর্যন্ত চোখ যায়, শুধু গাছ আর গাছ, পাইনে ঢাকা পাহাড় আর আমাদের বারান্দাটা ঝুলে আছে ঠিক গাছ গুলোর ডগায় । পাহাড়ের গায়ে ২/১ টা বাড়ি আর কিছু আকা বাকা রাস্তার ছাড়া কিছুই চোখে পড়লো না। বুক ভরে দম নিলাম, প্রশান্তি যেন মন ছুয়ে গেল। ভাবলাম নাহ, গতদিনের লম্বা জার্নিটা মেনে নেওয়া যায়। প্ল্যান অনুযায়ী আমাদের গাইড শিমলার ঘূরে দেখতে নিয়ে গেল, বেশ কয়টা মন্দির ঘুড়ে পৌঁছালাম কুফরীতে। আগের জায়গা গুলোতে ঘুরে একটু ক্লান্ত ছিলাম, এর উপর মোটা মানুষ তাই কুফরি গিয়ে সোজা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলাম। টুকটুক করে মিনিট ১৫- এর মধ্যোই পাহাড়ের চুড়ায় উঠে পরলাম। চুড়ায় উঠে আমার সাথে থাকা সবাই অভিভূত, কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি আশাহত !!! হয়তো আমার এক্সপকেটশেন অনেক হাই ছিল, আমি নিজেই জানতাম না কুফরীতে কি ছিল। যাইহোক, শুভ্র চুড়া গুলো কিছুটা হলেও মনের তৃপ্তি মিটিয়েছি কিন্তু পূরোপুরি নয়।
সন্ধ্যার পর ম্যাল রোড এ হাটা আর শপিংটাই ছিল বেস্ট। যেই আমি সাধারনত কোন শপিং করি না, সেই আমিই ৩-৪ টা ড্রসে কিনে নিলাম। র্শটকাটে রাস্তা খুঁজতে গিয়ে লফিটে চড়াটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেষ্টিং লেগেছে। মল রোডে ফল আর স্ট্রটি ফুড ছিল আমার কাছে অতুলনীয়। ঘুরতে ঘুরতে পথ ভুল করেছিলাম, এ গলি ও গলি ঘুরে, এই টানেল সেই সিঁড়ি বেয়ে একটু রাত করেই রিসোর্টে ফিরেছিলাম আমরা তাই ক্লান্ত হয়েই ঘুম।
পরদিন সকালেই মানালি যাত্রা … ক্লিক করুন শিমলা মানালি পর্ব ০২ ….